Posts

বন্ধু

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত নিচে প্রায় সদর দরজার কাছেই ছোট একটা ঘরে বিনোদ শোয় ,— এবং একা শোয় , নিচে একদম ফাঁকা , তবু কিছুতে বিনোদের ভয় নেই। সেদিন তাদের পাশের বাড়ির ছাদে যে একটা জলজ্যান্ত খুন হল — এত হৈ চৈ , এত কান্নাকাটি — এবং তারই ঘরের পাশের গলি দিয়ে যে সেই রক্তাক্ত মৃতদেহটা মোটরে করে হাসপাতলে নিয়ে গেল — এতেও বিনোদের ঘুম ভাঙেনি। মা তাকে জাগাতে এসে বলেছিল ,— পায়ের দিকেরও জানালাটা খুলে দাও , গরম আজ! মা বললেন ,— না তুই ওপরে চল , আমার কাছে শুবি। বিনোদ পাশ ফিরে বললে ,— কিসের তোমার ভয়! এত গোলমালে সেই খুনেটা তো আর ঘাপটি মেরে বসে থাকেনি , কখন দিব্যি সরে পড়েছে। সে আবার এখানে ফিরে আসবে নাকি ? মা অবুঝের মত বললেন , তুই চল ওপরে। তুই এ ঘরে একা থাকিস বলে রাত্রে আমার ঘুম হয় না। চ্যাঁচালেও শুনতে পাবো না। -চ্যাঁচানি তোমাদের শুনতে দেব নাকি ভেবেছ ? যদি ব্যাটা আসে টুটি টিপে তার দম বন্ধ করে দেব না ? তার দিদি বললেন ,— কিন্তু যাকে মেরেছে , সে যদি জানালা দিয়ে এসে মুখ বাড়ায়। বিনোদ হেসে বললে ,— তার মুখটা ভালো করে দেখার জন্যই তো পায়ের দিকের নালাটা খুলে রাখতে বললাম। মুখ যদি বাড়ায়-ই , ত...

ডিটেকটিভ

সুকুমার রায়   জলধরের মামা পুলিসের চাকরি করেন , আর তার পিসেমশাই লেখেন ডিটেকটিভ উপন্যাস। সেই জন্য জলধরের বিশ্বাস যে , চোর-ডাকাত জাল-জুয়াচোর জব্দ করবার সব রকম সংকেত সে যেমন জানে এমনটি তার মামা আর পিসেমশাই ছাড়া কেউ জানে না। কারও বাড়িতে চুরি-টুরি হলেও জলধর সকলের আগে সেখানে হাজির হয়। আর কে চুরি করল , কী চুরি হল , সে থাকলে এমন অবস্থায় কী করত , এসব বিষয়ে খুব বিজ্ঞের মতো কথা বলতে থাকে। যোগেশবাবুর বাড়িতে যখন বাসন চুরি হল , তখন জলধর তাদের বলল , “ আপনারা একটুও সাবধান হতে জানেন না , চুরি তো হবেই। দেখুন তো ভাঁড়ার ঘরের পাশেই অন্ধকার গলি। তার উপর জানলার গরাদ নেই। একটু সেয়ানা লোক হলে এখান দিয়ে বাসন নিয়ে পালাতে কতক্ষণ ? আমাদের বাড়িতে ও-সব হবার জো নেই। আমি রামদিনকে বলে রেখেছি জানলার গায়ে এমনভাবে বাসনগুলো ঠেকিয়ে রাখবে যে জানলা খুলতে গেলেই বাসনপত্র সব ঝনঝন করে মাটিতে পড়বে। চোর জব্দ করতে হলে এসব কায়দা জানতে হয়।’’ সে সময়ে আমরা সকলেই জলধরের বুদ্ধির খুব প্রশংসা করেছিলাম। কিন্তু পরের দিন যখন শুনলাম সেই রাত্রে জলধরের বাড়িতে মস্ত চুরি হয়ে গেছে , তখন মনে হল , আগের দিন অতটা প্রশংসা...

কাপালিকের কবলে

হেমেন্দ্রকুমার রায় সেদিন সকালবেলা। প্রখ্যাত রহস্য-সন্ধানী জয়ন্ত আর মাণিক বসে বসে সেদিনের খবরের কাগজ পড়ছিল। প্রতিদিনের খবরের কাগজ একান্তভাবে মন দিয়ে পাঠ করা জয়ন্তর দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। তাছাড়া তেমন কোনও প্রয়োজনীয় খবর দেখলে সে সেই অংশটুকু কেটে আটকে রাখে তার সংগ্রহের খাতায়। দুজনে কাগজের বিভিন্ন পাতা তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফেলল। জয়ন্ত বললে — দূর , সেই সব একঘেয়ে খবর — কে ডাণ্ডা মেরে কার মাথা ফাটাল , কে ছোরা দেখিয়ে টাকা নিয়ে পালাল। এ সব ত ’ অতি সাধারণ কেস। কিন্তু তেমন জটিল বা জবরদস্ত কেস একটাও চোখে পড়ছে না। এমন সময় বাইরের বারান্দায় ভারী পায়ের শব্দ শুনে জয়ন্ত বললে — মাণিক , সুন্দরবাবু আসছেন। হরিকে বল চা ও প্রাতঃরাশের ব্যবস্থা করতে। মাণিক উঠে গেল ভেতরে। একটু পরেই সুন্দরবাবুর প্রবেশ. ভারী কণ্ঠে বললেন — কি হে জয়ন্ত , শরীর ভাল ত ? জয়ন্ত হেসে বললে — আমার শরীর ত ’ চট করে খারাপ হবার নয় ; তা ত ’ জানেন। তবিয়ৎ ঠিক রাখার জন্য সাধনা করতে হয়। যখন কাজ থাকে না তখন দেহের তোয়াজ করি। সুন্দরবাবু হেসে বললেন — সে ত জানি ভায়া। তা একটা বিশেষ কাজে কাছে আসতে হলো। জয়ন্ত জ...